Monday, December 17, 2018

সৃজনশীল প্রশ্নপত্র -মোঃ হেলাল উদ্দিন

সৃজনশীল প্রশ্নপত্র

                              -মোঃ হেলাল উদ্দিন


 

সৃজনশীল অর্থ পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে নতুন কিছু তৈরি, নতুন চিন্তা, নতুন সমাধান/বিকল্প সমাধানের নির্দেশক তৈরি। প্রতিটি মানুষই স্বাতন্ত্র। প্রত্যেকেরই চিন্তা-চেতনা, ধ্যান-ধারণা, মানসিকতা, মূল্যবোধ দর্শন প্রত্যাবেক্ষন (Perception)  নীতি-নৈতিকতা, পর্যবেক্ষণ, দৃষ্টিভঙ্গি, পারঙ্গমতা ইত্যাদিতে ভিন্ন।তবে এ বিষয়গুলোতে কারো কারো সাথে মিল থাকলেও সেটা পুরোপুরি নয়। বরং আংশিক। প্রত্যেকের Finger Print/জিহ্বার রেখা/চোখের আইরিশ/গায়ের গন্ধ ইত্যাদি বিষয়ে ভিন্নতা অবশ্যম্ভাবী  (বৈজ্ঞানিক ভাবে পরিক্ষিত)। যে কথা বলছিলাম প্রত্যেকের পারঙ্গমতা। কেউ নাচে ভালো, কেউ গানে, কেউ ছবি আঁকানোয় কেউবা লেখাপড়ায়। লেখাপড়ার ক্ষেত্রেও ভিন্নতা কেউ বাংলায় ভালো কেউ ইংরেজিতে কেউবা গণিতে বা অন্য বিষয়ে। প্রত্যেকটি মানুষই তার পারঙ্গম বিষয়ে উপযুক্ত পরিবেশ পেলে সে তার সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে। অর্থাৎ সে তার ক্ষেত্রে (Area) ভাল নতুন কিছু করতে পারে। এটাই সৃজনশীলতা। প্রত্যেক মানুষই অসীম সম্ভাবনা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। তার সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে দেয়াই শিক্ষার তথা সৃজনশীলতার অন্যতম লক্ষ্য । একজন দৃষ্টিহীন লোক যেভাবে বিভিন্ন জায়গায় চলাফেরা করে একজন দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোককে যদি চোখ বেঁধে  দিয়ে দৃষ্টিহীন লোকের মতো চলতে বলা হয় সে কখনও চলতে পারবে না। যদিও উক্ত চলার পথটি দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোকের আগে থেকেই পরিচিত। তাইতো দৃষ্টিহীন লোকটি যা পারছে একজন দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোক তা পারছে না। তাইতো  বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধীদের  Disable  না বলে Differentlyable বলা হয়। কারণ তারাও কোন না কোন বিষয়ে পারদর্শী। শিক্ষা যদি হয় সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সাধন সে ক্ষেত্রে সৃজনশীলতার বিকল্প নাই। আমরা প্রতিটি শিক্ষা কমিশনে এমনকি জাতীয় শিক্ষানীতিতেও  দেখি আমাদের দেশের শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্য সুনাগরিক তৈরি করা । এটা শুধু শিক্ষানীতিতেই সীমাবদ্ধ। আমাদের জতীয় জীবনে তার প্রতিফলন ছিটে-ফোটাও নাই। সামাজিক/রাজনৈতিক/অর্থনৈতিকভাবে শিক্ষার লক্ষ্য হয়েছে- কিভাবে নামী-দামী এবং ক্ষমতা সম্পন্ন একটা চাকুরী প্ওায়া। আর সেই চাকুরী পাইতে হলে ভালো রেজাল্ট করতে হবে। সেটা পড়ে হোক বা না পড়ে অন্য কোন উপায় অবলম্বন করে হোক। চাকুরী পেতে রেজাল্ট একটা প্রভাব না ফেললেও চাকুরী পাওয়ার উপযুক্ত হওয়ার জন্য উপযুক্ত স্থানে ভর্তি হতে হবে আর সেই ভর্তির ক্ষেত্রেই পয়োজন ভালো রেজাল্ট। তাইতো এই রেজাল্ট ভাল করার জন্য মরিয়া অভিভাবক, শিক্ষক- শিক্ষার্থী, প্রাইভেট টিউটর, কোচিং সেন্টার,  গাইড বই প্রণেতা , প্রশ্ন ফাঁসের গং প্রভ’তি মহল। কেউ দেদারছে টাকা খরচ করছে/টাকা খরচ করতে বাধ্য হচ্ছে আর কেউ অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার বিভিন্ন ফন্দি-ফিকির করছে। যার ফলে নৈতিকতার মাথায় ঘুন ধরা শুরু হয় এখান থেকেই। অভিভাবকদের ধারণা সন্তানের পেছনে টাকা খরচ করবো। সন্তানকে ডাক্তার /ইঞ্জিনিয়ার বা অন্য কোন মোটা অর্থ উপার্জন করার মত চাকুরী পাওয়াইতে পারলেই (নীতি-নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে হলেও) সব বিনিয়োগের অর্থ অল্প দিনের মধ্যেই উসুল হবে। এখানে নীতি-নৈতিকতার কোন বিকাশ ঘটে না যা সুনাগরিকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ বিবর্জিত সৃজনশীলতা কখনো সুনাগরিক তৈরি করতে পারেনা ।সুস্থ্য হ্ওয়ার জন্য ভালো ঔষধ যেমন প্রয়োজন, তেমনি ভালো ঔষধ হলেই হবেনা সেটা সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগও করতে হবে। সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি এতো ভালো হওয়া সত্বেও লক্ষ্যভ্রষ্ট হওয়ার কারণগুলো নিম্নরুপ- 

১।সৃজনশীলতার লক্ষ্যের সাথে অভিভাবক/শিক্ষার্থীর লক্ষ্যের ব্যাপক ব্যবধান/বিপরীত মুখিতা।

২।শিক্ষকদের সৃজনশীল বিষয়ে ব্যাপক/গভীরভাবে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি নৈতিকতা মূল্যবোধ তথা পেশাদারিত্বের  উপর জোর দিয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাকরণ। 

৩। সমিতি/বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত প্রশ্ন বর্জন পূর্বক শিক্ষকদেরকে নিজের মেধা খাটিয়ে সৃজনশীল প্রশ্ন তৈরিপূর্বক প্রতিষ্ঠানের সকল ধরণের পরীক্ষা গ্রহণ ।

৪। পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। এক্ষত্রে শিক্ষকগণ মনোযোগ সহকারে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করবেন।

৫ ।স্বচ্ছতার সাথে ধারাবাহিক মূল্যায়নের উপর জোরদিয়ে চ’ড়ান্ত মূল্যায়ন করতে হবে। 

৬। শিক্ষার্থীকে শ্রেণিপাঠ মুখী করা। 

৭। রেজার্টের ভিত্তিতে না হয়ে পরীক্ষার মাধ্যমে পরবর্তী স্তরে ভর্তিকরণ। 

৮। শিক্ষকদের  নিয়োগ-বাণিজ্য বন্ধ করার পাশাপাশি যিনি মনে প্রাণে শিক্ষক হতে চান তাকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া।

৯। নোটবই গাইড বই পাবলিস্ট এবং ব্যবহার বন্ধ করা। 

 ১০। প্রাইভেট/কোচিং বানিজ্য বন্ধ করতে হবে।

১১। সকল ধরনের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধকরণ। ১২। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উপর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ বন্ধকরণ। 
Base Data  ছাড়া যেমন গবেষণা সম্ভব না।তেমনি পূর্ব অভিজ্ঞতা ব্যতিরেেেক সৃজনশীল হওয়া আদেও সম্ভব কিনা সেটা প্রশ্নের দাবি রাখে। আর ক্ষেত্রে শিক্ষা ব্যবস্থার প্রাথমিক স্তরে এই সৃজনশীলতা বাস্তবায়ন শিক্ষার জন্য হুমকি স্বরুপ। কেননা প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার ভীত(Base) দিতে হয়, আর সেখানেই যদি উদ্ভাবনী  চিন্তা করতে দেই তা হবে ভীষণ ক্ষতিকর।

মোঃ হেলাল উদ্দিন
শিক্ষা কর্মকর্তা

Sunday, December 09, 2018

মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও আমার চেষ্টা
মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাবেক প্রধান শিক্ষক
এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমারখালী, কুষ্টিয়া।


বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যখন বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও সর্বক্ষেত্রে কম্পিউটার ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়। সে সময় হিসাব করলে আমার আর বেশিদিন চাকুরী নেই। তখন আমি চিন্তা করছি কিভাবে কম্পিউটার শিখব। এরই মধ্যে জানতে পারলাম আমার প্রিয় ছাত্র দূর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের সহকারী শিক্ষক জনাব রাসেদ রায়হান লিটন খুব দক্ষ কম্পিউটার শিক্ষক। সাথে সাথেই আমি তাঁর সাথে দেখা করি এবং এ বিষয়ে আলোচনা করি। সে আমাকে কম্পিউটার শিখার জন্য উৎসাহিত করে। শুধু তাই নয় সে দিন থেকেই সে আমার স্কুলে (কুমারখালী এম এন পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়) এসে আমাকে কম্পিউটার শেখানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। মাঝে মাঝে আমার মনে হচ্ছিল আমি হয়ত পারব না। কিন্তু আমার পরম স্নেহভাজন ছাত্র রাশেদ, রায়হান, লিটন ও নাছোড় বান্দা সে আমাকে না শিখিয়ে ছাড়বে না। আবশেষে আমি তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার বিষয়ে যে জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন তা শিখতে সক্ষম হয়েছিলাম। পাশাপশি আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের এবিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহীত করি। আমি
নিজে বিদ্যালয়ের সমস্ত কম্পিউটারের কাজ করতাম। নিজে ডিজিটাল কনটেন্ট তৈরী করে নিজের ক্লাস গুলোকে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন করতাম। একটা অধ্যায়ের জন্য একাধিক কনটেন্ট ব্যবহার করতাম। কোন কোন সময় শিক্ষক বাতায়ন থেকে ভাল কনটেন্ট পেলে তা ডাউনলোড করে ছাত্রদের দেখাতাম। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা অধিক আগ্রহী হতো। সে দিকটা লক্ষকরে সর্বাধিক ক্লাস মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গ্রহনের জন্য ০৮/০৯/২০১৫ থেকে ২০/০৯/২০১৫ পর্যন্ত টিফিনের পর ৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার ইনহাউজ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করি। প্রশিক্ষক হিসাবে আমি নিজে ও আমার সাথে ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ রবিউল আলম, বাংলার শিক্ষক জনাব মোঃ দিনারুল ইসলাম, কম্পিউটার ডেমোনেস্টটর জনাব হুমায়ুন আহম্মেদ রিমন ও  টেড ইন্সটেক্ট্রর তৌহিদুল ইসলাম। আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করেন দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক জনাব রাশেদ রায়হান লিটন, একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব হেলাল উদ্দিন ও সহকারি শিক্ষা অফিসার জনাব সাইফুল আলম। একটানা ১২দিন প্রশিক্ষন শেষে ১৩তম দিনে সকল শিক্ষক শিক্ষিকা কতটুকু অর্জন করেছেন তা একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব হেলাল উদ্দিন ও জনাব রাশেদ রায়হান লিটন মূল্যায়ন করেন। নূন্নতম পক্ষে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা
নিজে কনটেন্ট তৈরি করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। এ বিষয়ে আমি একটা স্মরনিকা প্রাকাশ করেছিলাম। যেখানে কুমারখালীর UNO, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের সভাপতি, কম্পিউটার শিক্ষক রাশেদ রায়হান লিটন ও সকল শিক্ষক শিক্ষিকার মতামত আছে। উল্লেখ্য ইনহাউজ প্রশিক্ষন প্রানবন্ত করার জন্য প্রতিদিন সকলের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্তা থাকত। এই প্রশিক্ষনকে ধরে রাখার জন্য পরের বছরে ৬দিনের ফলোআপ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রশিক্ষনের সাথে সাথে সকলেই শিক্ষক বাতায়নের সদস্য হয়েছিলেন। এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষক জনাব মোঃ রবিউল আলম ও জনাব মোসাঃ হোসনেআরা UITRCE এ প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমার নিজের তৈরি কন্টেন্ট শিক্ষক বাতায়নে আপলোড করেছি। 
 
আমি দায়িত্ব পালনের সময় বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন  তহবিল থেকে ২টা সহ মোট ১০টা মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষ তৈরি করেছিলাম। আমি প্রতিদিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস, পর্যবেক্ষণ সহ ড্যাসবোর্ড তথ্য প্রেরণ করতাম। আমার চাকুরী জীবনের শেষদিন পর্যন্ত আমি বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছি। 
 
অনেক ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। সময়ের অভাবে কিছু কাজ করতে পারিনাই। তাই শিক্ষক বাতায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য স্বচেষ্ট থাকব ইনশাল্লাহ। বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিক্ষকগণ যেমন যোগ্য ও দক্ষ হয়ে গড়ে উঠবেন ঠিক তেমনি তাঁদের সান্নিধ্যে ছাত্র-ছাত্রীরাও আদর্শ, যোগ্য ও আলোকিত মানুষরূপে গড়ে উঠবে এই আমার প্রত্যাশা।