মাল্টিমিডিয়া ক্লাস ও আমার চেষ্টা
মোঃ শহিদুল ইসলাম, সাবেক প্রধান শিক্ষক
এম এন পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, কুমারখালী, কুষ্টিয়া।
বর্তমান
সরকারের মাননীয় প্রধান মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার
ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় যখন বাংলাদেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও
সর্বক্ষেত্রে কম্পিউটার ইন্টারনেটের ব্যবহার ব্যাপকভাবে শুরু হয়। সে সময়
হিসাব করলে আমার আর বেশিদিন চাকুরী নেই। তখন আমি চিন্তা করছি কিভাবে
কম্পিউটার শিখব। এরই মধ্যে জানতে পারলাম আমার প্রিয় ছাত্র দূর্গাপুর
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটারের সহকারী শিক্ষক জনাব রাসেদ রায়হান লিটন খুব
দক্ষ কম্পিউটার শিক্ষক। সাথে সাথেই আমি তাঁর সাথে দেখা করি এবং এ বিষয়ে
আলোচনা করি। সে আমাকে কম্পিউটার শিখার জন্য উৎসাহিত করে। শুধু তাই নয় সে
দিন থেকেই সে আমার স্কুলে (কুমারখালী এম এন পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়) এসে
আমাকে কম্পিউটার শেখানোর জন্য জোর প্রচেষ্টা চালায়। মাঝে মাঝে আমার মনে
হচ্ছিল আমি হয়ত পারব না। কিন্তু আমার পরম স্নেহভাজন ছাত্র রাশেদ, রায়হান,
লিটন ও নাছোড় বান্দা সে আমাকে না শিখিয়ে ছাড়বে না। আবশেষে আমি তাঁর
ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় একটা প্রতিষ্ঠানের জন্য কম্পিউটার বিষয়ে যে জ্ঞান
অর্জন প্রয়োজন তা শিখতে সক্ষম হয়েছিলাম। পাশাপশি আমার বিদ্যালয়ের
শিক্ষক-শিক্ষিকা ও ছাত্র-ছাত্রীদের এবিষয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য উৎসাহীত করি।
আমি
নিজে বিদ্যালয়ের সমস্ত কম্পিউটারের কাজ করতাম। নিজে ডিজিটাল কনটেন্ট
তৈরী করে নিজের ক্লাস গুলোকে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে উপস্থাপন
করতাম। একটা অধ্যায়ের জন্য একাধিক কনটেন্ট ব্যবহার করতাম। কোন কোন সময়
শিক্ষক বাতায়ন থেকে ভাল কনটেন্ট পেলে তা ডাউনলোড করে ছাত্রদের দেখাতাম।
মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস গুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা অধিক আগ্রহী
হতো। সে দিকটা লক্ষকরে সর্বাধিক ক্লাস মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে গ্রহনের জন্য
০৮/০৯/২০১৫ থেকে ২০/০৯/২০১৫ পর্যন্ত টিফিনের পর ৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার
ইনহাউজ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করি। প্রশিক্ষক হিসাবে আমি নিজে ও আমার সাথে
ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মোঃ রবিউল আলম, বাংলার শিক্ষক জনাব মোঃ
দিনারুল ইসলাম, কম্পিউটার ডেমোনেস্টটর জনাব হুমায়ুন আহম্মেদ রিমন ও টেড
ইন্সটেক্ট্রর তৌহিদুল ইসলাম। আমাদের সাথে সার্বক্ষনিক সহযোগিতা করেন
দুর্গাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কম্পিউটার শিক্ষক জনাব রাশেদ রায়হান লিটন,
একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব হেলাল উদ্দিন ও সহকারি শিক্ষা অফিসার জনাব
সাইফুল আলম। একটানা ১২দিন প্রশিক্ষন শেষে ১৩তম দিনে সকল শিক্ষক শিক্ষিকা
কতটুকু অর্জন করেছেন তা একাডেমিক সুপারভাইজার জনাব হেলাল উদ্দিন ও জনাব
রাশেদ রায়হান লিটন মূল্যায়ন করেন। নূন্নতম পক্ষে সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা
নিজে
কনটেন্ট তৈরি করে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার যোগ্যতা
অর্জন করেন। এ বিষয়ে আমি একটা স্মরনিকা প্রাকাশ করেছিলাম। যেখানে
কুমারখালীর UNO, মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার, বিদ্যালয়ের সভাপতি, কম্পিউটার
শিক্ষক রাশেদ রায়হান লিটন ও সকল শিক্ষক শিক্ষিকার মতামত আছে। উল্লেখ্য
ইনহাউজ প্রশিক্ষন প্রানবন্ত করার জন্য প্রতিদিন সকলের জন্য দুপুরের খাবারের
ব্যবস্তা থাকত। এই প্রশিক্ষনকে ধরে রাখার জন্য পরের বছরে ৬দিনের ফলোআপ
প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। প্রশিক্ষনের সাথে সাথে সকলেই শিক্ষক
বাতায়নের সদস্য হয়েছিলেন। এ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষক জনাব মোঃ
রবিউল আলম ও জনাব মোসাঃ হোসনেআরা UITRCE এ প্রশিক্ষক হিসাবে কর্মরত আছেন।
ব্যক্তিগত ভাবে আমার নিজের তৈরি কন্টেন্ট শিক্ষক বাতায়নে আপলোড করেছি।
আমি
দায়িত্ব পালনের সময় বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন তহবিল থেকে ২টা সহ মোট ১০টা
মাল্টিমিডিয়া শ্রেণি কক্ষ তৈরি করেছিলাম। আমি প্রতিদিন মাল্টিমিডিয়া ক্লাস,
পর্যবেক্ষণ সহ ড্যাসবোর্ড তথ্য প্রেরণ করতাম। আমার চাকুরী জীবনের শেষদিন
পর্যন্ত আমি বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নতির জন্য চেষ্টা করেছি।
অনেক
ক্ষেত্রে সফল হয়েছি। সময়ের অভাবে কিছু কাজ করতে পারিনাই। তাই শিক্ষক
বাতায়নের সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে শিক্ষা ক্ষেত্রে পরিবর্তনের জন্য স্বচেষ্ট
থাকব ইনশাল্লাহ। বর্তমান ডিজিটাল যুগে শিক্ষকগণ যেমন যোগ্য ও দক্ষ হয়ে গড়ে
উঠবেন ঠিক তেমনি তাঁদের সান্নিধ্যে ছাত্র-ছাত্রীরাও আদর্শ, যোগ্য ও আলোকিত
মানুষরূপে গড়ে উঠবে এই আমার প্রত্যাশা।



No comments:
Post a Comment