-মাসুমা আক্তার
‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়।’ কথাটা যে আমার ক্ষেত্রে এতোটা সত্যি হয়ে যাবে, সেটা আমি কখনোই ভাবতে পারিনি। আর এই সত্যিটা আমার সব স্বপ্নকে ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বলোকে। নিজের কাছেই নিজেকে ভীষণ অচেনা লাগছে। আমি যেন জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি। একটু ধাক্কা লাগলেই কাঁচের টুকরোর মত ভেঙে খান খান হয়ে যাবে স্বপ্নগুলো।
গতবছর ২৫-১০-’১৪ইং ঢাকা টিটিসি-তে ছিল মাল্টিমিডিয়া
কন্টেন্ট প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বের প্রথম দিন। ২৬- ১০-‘১৪ইং লাঞ্চের পূর্ব
মুহূর্ত চলছিল উপস্থাপন ও শ্রদ্ধেয় বিচারক মণ্ডলীর স্কোরিং-এর কাজ। লাঞ্চের পর
দুরু দুরু বক্ষে সবাই অপেক্ষা করছিল ফলাফলের জন্য। প্রতিযোগিতার পর্বগুলো ছিল খুবই
ব্যতিক্রম আর চমৎকারিত্বে ভরপুর। তাই কেউই ঠিকঠাক বুঝতে পারছিল না কার ফলাফল কেমন
হবে। সুদক্ষ বিচারকমণ্ডলীর সুনিপূণ পরিচালনায় উপস্থাপন পর্বটি ছিল খুবই
বৈচিত্র্যময় আর অর্থবহ।
লাঞ্চের পর আমরা সবাই ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম
টিটিসি ক্যাম্পাসের সবুজ প্রকৃতিতে। সবার মনে কিছুটা ভয় আর দোটানা ভাবনার দোলাচল।
ল্যাবের ভেতরে চলছিল চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণার কাজ। আর সেরা ১০ নির্বাচন।
এক সময়
আমাদেরকে ভেতরে ডাকা হল। নিজ নিজ আসনে সবাই বসে পড়লাম চুপচাপ। মাননীয় শিক্ষা সচিব
জনাব নজরুল ইসলাম খান মহোদয় ফলাফল ঘোষণা করবেন। এখন শুধু তারই অপেক্ষা। একসময় উনিও
আসলেন আমাদের মাঝে। কিছু সৌজন্যমূলক
কথাবার্তার পর এল সে পরম মুহূর্ত। যার জন্য এত শ্রম, এত মেধা আর এত প্রচেষ্টা
সবার। মাননীয় সচিব মহোদয় শুরু করলেন ফলাফল ঘোষণার কাজ। শুরু করলেন ১০ নম্বর থেকে।
২ নম্বর পর্যন্ত এসে থেমে গেলেন। কয়েকটি অতি পরিচিত নাম শুনতে পেলাম। কিন্তু আমার
নাম তো নেই! কিছুটা হতাশ তো বটেই। নার্ভাস ও বেশ। তারপর যখন প্রথম জনের নাম ঘোষণা
হল, কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছিল না সেটা। আমার নাম! আমার নাম বলছে মাইকে! পা দু’টো কেউ
যেন পেরেক দিয়ে গেঁথে দিয়েছে মাটিতে। হাঁটুতে জোর পাচ্ছিলাম না কিছুতেই। তারপর
নিজের অজান্তেই কখন, কিভাবে উঠে দাঁড়িয়েছিলাম বলতে পারবো না। অবাধ্য চোখের জলে
সবকিছু কেমন ঝাপসা দেখাচ্ছিল।
যে আমি
ঠিকভাবে কম্পিউটারের মাউসই ধরতে পারতাম না, সেই আমি আজ এখানে! যারা আমাকে তাদের
শ্রদ্ধা, শুভেচ্ছা আর বন্ধুত্ব দিয়ে ধরে ধরে কাজ শিখিয়েছেন, তাদের কাছে আমি অশেষ
কৃতজ্ঞ। কৃতজ্ঞ আমি আমার পরিবার, সহকর্মী, আমার কর্তৃপক্ষের কাছে। যাদের উৎসাহ,
ভালোবাসা আর সহযোগিতা না পেলে আজ আমি কিছুতেই এখানে আসতে পারতাম না। আমি কৃতজ্ঞ আমার শ্রদ্ধেয় বিচারক মণ্ডলীর কাছে।
তাদের সুন্দর মূল্যায়নে আমার আজকের এই অবস্থান।
সবচেয়ে বড় ঋণ
আমার এ টু আই আর শিক্ষক বাতায়নের কাছে। এই প্ল্যাটফর্ম না পেলে ‘সেই আমি’ কখনো ‘এই
আমি’ হতে পারতাম না। তাই যতদিন বাঁচবো ততদিন কাজ করে যাবো এখানে নিরলসভাবে।
No comments:
Post a Comment